রোহিঙ্গার রক্তের উপর হেঁটে আবার ক্ষমতায় যেতে মরিয়া অংসান সু চি
স্টাফ রিপোর্টার, রোহিঙ্গা টিভি:
মিয়ানমারের সমালোচিত ডিফ্যাক্টো লিডার অংসান সু চি রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্তের উপর হেঁটে আবার ক্ষমতায় যেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার ইয়াঙ্গুনের নির্বাচন অফিসে প্রার্থীতা দাখিল করেন। এসময় তার সাথে ৫০ জন সমর্থকও ছিল।

২০১৬ সালের নভেম্বরে তথাকথিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জয় লাভ করে সু চি’র দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। ওই বছর থেকেই মিয়ানমারের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাথে রক্তের হোলি খেলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্রবাদী রাখাইন গোষ্ঠী। সু চি’র দল ক্ষমতায় থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করেন সু চি।
২০১৭ সালের আগস্টের শেষ দিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মরণ কামড় দেয় সেনাবাহিনী ও মৌলবাদী রখাইনরা। পরিকল্পিত গণহত্যার মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা হত্যা, অগণিত নারী ও শিশু ধর্ষণ, ৫০ হাজারের অধিক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং বেকসুর রোহিঙ্গা তরুণ ও যুবকদের বন্দি করে। এতে করে প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করে। এ ঘটনায় সারাবিশ্বে নোবেলজয়ী অংসান সু চির বিরুদ্ধে ঝড় ওঠে। নিন্দা জ্ঞাপন করে বার্মিজ নেত্রী সু চিকে। তার অনেক সম্মাননা পদক কেড়ে নেয়া হয়। কিন্তু তারপরও ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে বার্মিজ সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফায় গায় সু চি।
রোহিঙ্গ বিদ্বেষী বৌদ্ধদের নিকট সমানভাবে জনপ্রিয় সু চি ১৯৯০ সালের নির্বাচনেও জয় লাভ করেন। কিন্তু তৎকালীন জান্তা সরকার তাকে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করতে দেননি। সেনা সরকার নির্বাচিত সু চিকে গৃহবন্দি করেন। ২০১০ সালে তিনি গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান।
মিয়ানমারের প্রাণপুরুষ অংসানের কন্যা হওয়ায় রোহিঙ্গাদের নিকটও এক সময় সু চির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে সুচিকে একচেটিয়া ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নেয়ার চেষ্টা করে রোহিঙ্গারা। আরাকানের মুসলমানরা সু চিকে গণতন্ত্রের মানসকন্যা সাব্যস্থ করতো। রোহিঙ্গারা মনে করতো সু চি ক্ষমতায় গেলে তাদের উপর করা সেনাবাহিনীর নির্যাতন নীপিড়ন বন্ধ হবে। কিন্তু তিনি ক্ষমতায় আরোহনের পর রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের স্ট্রীম রোলায় চালায় সেনাবাহিনী। এ নির্যাতনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রাখে সু চি।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিষয়ে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ যা হবে তা মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল সুচি। আনান কমিশন রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দেয়ার মধ্যেই সমাধান বলে সুপারিশ করলেও অংসান কন্যা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। উপরন্তু রোহিঙ্গা গণহত্যার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের বিচার আদালত আইসিজেতে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানীতে তিনি রোহিঙ্গা বিরোধী বক্তব্য দেন। সেনাবাহিনীর হয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন।
Comments are closed.